অন্য ঝর্ণা থেকে অনেকটা ব্যতিক্রমী এই ঝর্ণা হল বোয়ালিয়া ঝর্ণা যা মিরেরসরাই বাজারে কাছে। এই ঝর্ণায় যেতে হলে প্রথম আপনাকে মিরেরসরাই বাজারে আসতে হবে। মিরেরসরাই বাজারে পূ্র্বদিকে যে রোড গেল সে রোড দিয়ে সিএনজি বা অটোরিকশা করে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত যেতে হবে আপাতত এখানে কোন চাঁদাবাজ নেই। তাই আপনাকে কোন টিকেট কিনতে হবে না। জলপ্রপাতের শো শো শব্দে প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠে নিমিষেই। ঝর্ণার অপার সৌন্দর্যের পাশাপাশি ট্র্যাকিং পথ ও পর্যটকদের অনেক আকর্ষণ করে থাকে। কারণ এডভেঞ্চারের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় এখানে। দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করে ঝর্ণার শীতল জলের ছোঁয়া পাওয়ার আনন্দ অন্যরকম।
এখানে ছোটবড় কমপক্ষে পাঁচটি ঝর্ণা এবং অনিন্দ্যসুন্দর একটি পাথুরে ঢাল আছে যার নাম উঠান ঢাল। এ ট্রেইলের মূল ঝর্ণা হলো বোয়ালিয়া এবং এ ঝর্ণায় যাওয়া অপোকৃত সহজ। বড় ঝর্ণাটি সবচেয়ে কাছে। পাহাড়ের জিরি পথ দিয়ে যেতে হাতের ডানে যে বাঁক পড়বে সে পথ দিয়ে প্রথম বড় ঝর্ণা পড়বে। আর বাকিগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট সেগুলো জিরি পথ দিয়ে সোজা হাটতে হবে। এখানে উচু নিচু পাথর কম, তাই দুর্ঘটনাও কম। তবে প্রথম ঝর্ণায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ খাড়া ঢালু আছে, পড়ে গেলে মহাবিপদ। বোয়ালিয়া ভারী বর্ষায় খুব মারাত্মক রূপ ধারণ করে এবং এ সময়টাতেই এ ঝর্ণাটি সবচেয়ে সুন্দর। মূল ঝর্ণার পানি যেখানটায় পড়ে সেটা অনেকটা গুহা কিংবা গভীর খাদের মতো। ভরা বর্ষায় সাঁতরে এই ঝর্ণায় যেতে হয়। ঝর্ণার ওপরে আরো ছোট ছোট ঝর্ণা আছে এবং ঝিরিপথ খুবই সুন্দর।
বোয়ালিয়া ট্রেইলের মূলত দুইটা পার্ট, উত্তর-পূর্ব আর দক্ষিণ-পূর্ব। দক্ষিণ-পূর্বে বোয়ালিয়া যেটি খুব বেশি দূরে না। তবে উত্তর-পূর্বে ট্রেইলে বিভিন্ন নামের আরো চার-ছয়টি ছোটবড় ঝর্ণা রয়েছে। বর্ষাকালে ছড়ায় প্রচুর পানি থাকে। এমনকি কোথাও কোথাও একেবারে বুক সমান পানি। এই ছড়ায় প্রচুর বালু আর বন্ধুর অনেক পাথরের কারণে হাঁটা অনেক কষ্টসাধ্য। তার ওপর ভয়ঙ্কর বাঁশের কঞ্চি কিংবা গাছের ডাল। এই ছড়াটা বেশ অপরিষ্কার মনে হয়েছে। সম্ভবত এ পথে যাতায়াত কম বলে পাথরগুলো মারাত্মক পিচ্ছিল। আঁকাবাঁকা এই ঝিরিপথে প্রচুর বাঁশঝাড় চোখে পড়ে। পথে ছোট ছোট ঝর্ণার দেখা মেলে। বোয়ালিয়া ট্রেইলে আছে বোয়াইল্যা, বাউশ্যা, অমরমানিক্য ঝর্ণা। এছাড়া আছে ন হাইত্যে কুম, পালাকাটা খুম, উঠান ঢাল, আন্দারমানিক ঝর্ণা, তিন নং ছড়া, কলাতলি ঝর্ণা, লতকাও/ কেম্বাতলী ঝর্ণা এবং লতা বায়ানী। এই ট্রেইলের মূল আকর্ষণ এর হরেক রকমের সৌন্দর্যের কাছেই। এক একটি ঝর্ণা, কুম একেক রকমের সৌন্দর্যের ডালা সাজিয়ে বসে আছে।
কিভাবে যাবেন
প্রথমে আপনাকে চট্টগ্রাম আসতে হবে। যদি কাছে থাকতে চান সীতাকুন্ড বাজারে থাকতে পারেন, এখানে থাকার হোটেল আছে। কাছাকছি মিরেরসরাই বাজার আছে সেখানেও থাকতে পারবেন। চট্টগ্রাম শহরে থাকতে চাইলে একেখান, অলংকার, নিউমার্কেট এলাকগুলোতে থাকতে পারেন।
যদি আপনি মিরেরসরাই বাজারে থাকেন তাহলে সকাল বেলা সিএনজি করে পাহাড়ের পাদদেশে চলে যেতে পারবেন। সীতাকুন্ড বাজারে থাকলে ২০/২৫ টাকা দিয়ে মিরেরসরাই বাজারে আসতে পারবন। আর চট্টগ্রাম শহরে থাকলে প্রথমে অলংকার আসতে হবে। অলংকার থেকে চয়েস, উত্তরা বাসে করে মিরেরসরাই বাজারে ৫০-৮০ টাকা ভাড়া নিবে। পাহাড়ের পাদদেশে এসে উত্তর দিকে কাচা রাস্তায় হাটা শুরু করবেন। ৪/৬ ঘন্টা সয়ম লাগবে ফিরে আসতে।