সোনাইছড়ি ট্রেইলটি সীতাকুণ্ডের মীরসরাই পাহাড় রেঞ্জের হাদি ফকিরহাট বাজার এলাকায় অবস্থিত। বন্য পাথুরে সোনাইছড়ি ট্রেইল বারৈয়াঢালা অভয়ারণ্যের আওতাভুক্ত। ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ট্রেইলটি মীরসরাইয়ের অন্যান্য ট্রেইলগুলো থেকে একদম আলাদা এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষায় এর ভয়াবহতা বেড়ে যায় অনেকগুন। বৈচিত্র্যময় এই ট্রেইল পুরো মাত্রায় বুনো এবং পাথুরে। আপনাকে বুঝতে হবে ৩/৪ কিলোমিটার হাটা আর ২৮ কিলোমিটার হাঁটা সহজ বিষয় নয়। তাই আপনাকে ভোরেই হাদি ফকিরহাট বাজারে চলে আসতে হবে। মন মানসিকতা থাকতে হবে শক্ত কারণ আপনি দীর্ঘ কঠিন পথ পাড়ি দিতে যাচ্ছেন। সোনাইছড়ি ট্রেইলের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য এর পাথুরে পথ আর বোল্ডার। এই ট্রেইলে তিন্দুর বড় পাথরের মত প্রচুর বড় বড় পাথর দেখতে পাবেন। পাথুরে এই ট্রেইলে বড় বড় পাথরের ঢল আর পাহাড়ি সৌন্দর্য আসলেই মনোমুগ্ধকর। আপনাকে নিয়ে যাবে এক অজানা রাজ্যে। পুরো পথটাই বড় বড় পাহাড়, গভীর গিরিখাত, উঁচু নিচু ছড়া আর গভীর কুমে ভরা এবং ট্রেইলের শেষ মাথায় মনোমুগ্ধকর সোনাইছড়ি ঝর্ণা পাবেন। সম্পূর্ণ পথটাই আপনাকে দেবে এক ভয় মিশ্রিত শিহরণ। বর্ষায় যাওয়া খুবই বিপজ্জনক। পিচ্ছিল ঝিরিপথ, খাড়া পাহাড় ও বাদুইজ্জাখুম পার হয়ে যাওয়ার সময় যে রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি হয় সেই অভিজ্ঞতা সারাজীবনের এক অনন্য সঞ্চয়। তবে এই সোনাইছড়ি ট্রেকিং ট্রেইলে যেতে হলে দলগত ভাবে যাওয়া উচিত এবং ট্রেকিংয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে সুবিধা হবে। বাদুইজ্জাকুমের দু’পাশের ১০০-১৫০ ফুট উঁচু খাড়া পাথুরে দেয়ালের অন্ধকারে হাজার হাজার বাঁদুরের ডানা ঝাপটানো শব্দ ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি করে। আর ২৮ কিলোমিটার ট্রেইলের শেষ প্রান্তে পৌঁছালে অপূর্ব সোনাইছড়ি ঝরনা নিমিষেই সব ক্লান্তি উড়িয়ে দেয় বাতাসের সঙ্গে। এত সুন্দর প্রকৃতি, অনুচ্চ পাহাড়ে ঘেরা ঝিরিপথ, নানা রকম গাছ, সেসব গাছে সবুজ ছাড়াও হলদে, লালচে রঙের পাতার মিলবে। কিচিরমিচির পাখির ডাকে হারিয়ে যাবেন এক স্বপ্নের জগতে। নিজেকে মনে হতে পারে বন্দি এক রাজকন্যা, যে হঠাৎ করে পালানোর সুযোগ পেয়ে চলে এসেছে এ ঝিরিপথে। দুর্গম পাহাড়-পর্বত পেরিয়ে একটি ট্রেইল জয় করা কতটা আনন্দের, তা হয়তো সোনাইছড়িতে গেলে ষোলো-আনা বোঝা যায়। সীতাকুণ্ডের গহীন পাহাড়ে কী পরিমাণ রহস্য আর সৌন্দর্য যে লুকিয়ে আছে তা সেখানে না গেলে অজানাই রয়ে যাবে। এখানে যত পাহাড়ি ট্রেইল আছে তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম, রহস্যময় এবং সুন্দর ট্রেইল হলো সোনাইছড়ি। কখনো বড় বড় বোল্ডার আর দুই পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া, আবার কখনো খাড়া কোনো পথ বেয়ে উপরে উঠা। কোথাও স্বল্প আলো আবার কোথাও সম্পূর্ণ উন্মুক্ত আকাশ। এ যেন ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়। এই ট্রেইলটি নানা রহস্যে আবৃত। এখানে রয়েছে বাদুইজ্জা কুম। কুম বা সুড়ঙ্গ যাই বলা হউক না কেন এটি একটি সংকীর্ণ অথচ বিস্তৃত গভীর কুম, যার দুপাশের পাথুরে দেয়াল খাড়া ১০০-১৫০ ফুট উঁচু। ভেতরে গহীন অন্ধকার।
কিভাবে যাবেন
প্রথমে আপনাকে চট্টগ্রাম আসতে হবে। যদি কাছে থাকতে চান সীতাকুন্ড বাজারে থাকতে পারেন, এখানে থাকার হোটেল আছে। কাছাকছি মিরেরসরাই বাজার আছে সেখানেও থাকতে পারবেন। চট্টগ্রাম শহরে থাকতে চাইলে একেখান, অলংকার, নিউমার্কেট এলাকগুলোতে থাকতে পারেন।
যদি আপনি মিরেরসরাই বাজারে থাকেন তাহলে সকাল বেলা ১০ টাকা দিয়ে হাদি ফকিরহাট বাজার চলে যেতে পারবেন। সীতাকুন্ড বাজারে থাকলে ২০/২৫ টাকা দিয়ে হাদি ফকিরহাট বাজার আসতে পারবন। আর চট্টগ্রাম শহরে থাকলে প্রথমে অলংকার আসতে হবে। অলংকার থেকে চয়েস, উত্তরা বাসে করে হাদি ফকিরহাট বাজার ৫০-৮০ টাকা ভাড়া নিবে।
হাদি ফকিরহাট জামে মসজিদ থেকে সিএনজি করে বড় পাথর স্থানে চলে যাবেন। তারপর হাঁটা শুরু।