নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ে অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। এখানে মূলত তিনটি ঝর্ণা রয়েছে ঝর্ণা। এগুলো হলো কুপিকাটাকুম, মিঠাছড়ি এবং বান্দরকুম বা বান্দরিছড়া। আর ঝর্ণাগুলোতে যাওয়ার যে ঝিরিপথ রয়েছে সেটাকে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল বলে। বর্ষাকালেই এ ঝর্ণার প্রকৃত সুন্দর রূপ দেখা যায়। তবে এ সময়ে সতর্কও থাকতে হবে বেশি। মিরসরাই উপজেলার নয়াদুয়ারবাজার এলাকায় এটির অবস্থান । তাই আপনাকে নয়াদুয়ারবাজারে আসতে হবে। নাপিত্তাছড়া বললেও হবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে যাওয়ার পথে নয়দুয়ার বাজারটি মূলত মিরসরাইয়ের শুরুতে নিজামপুর অতিক্রম করা মাত্রই। যে পাশে গাড়ি থেকে নামতে হবে, সে পাশেই রয়েছে খুব সুন্দর একটি স্থানীয় মসজিদ আর কয়েকটি দোকান। রাস্তার অপরপাশে দেখা যাবে নাপিত্তাছড়া জলপ্রপাত নামে ঝোলানো ব্যানার। এখান থেকেই মূলত নাপিত্তাছড়ার পথ শুরু। বর্ষার সময় যাওয়া সবচেয়ে ভাল সময়, তাহলে ঝর্ণার সর্বোচ্চ সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। সীতাকুণ্ড-মিরসরাই অঞ্চলের ঝর্ণাগুলোর মধ্যে খৈয়াছড়ার পর এ ঝর্ণায় সবচেয়ে বেশি পর্যটকের আনাগোনা। পুরো নাপিত্তাছড়া ট্রেইল জুড়ে আপনার অন্যতম বন্ধু হবে বাঁশ। কর্দমাক্ত আর পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিতে বাঁশ কিংবা লাঠির প্রয়োজন আছে, তাই নয়দুয়ার বাজার থেকেই ছোট ছোট বাঁশ কিনে নেবেন। গ্রামীণ পথ অতিক্রম করতে করতে কিছুদূর পরেই পেয়ে যাবেন একটা রেললাইন। ঠিক এ জায়গায় কয়েকটি ভাতের দোকান আছে। ঝর্ণা থেকে ফেরার পথে এখানেই সেরে নিতে পারেন দুপুরের খাওয়াদাওয়া।
পাহাড়ি পথ ধরে ২০ মিনিটের মতো হাঁটলেই পেয়ে যাবেন প্রথম ঝর্ণা কুপিকাটাখুম। এ ঝর্ণায় পানির পরিমাণ অনেক বেশি। গভীরতা বেশি হওয়ায় ঝর্ণার একেবারে সামনে যেতে হলে সাঁতার কেটে যেতে হবে। নাপিত্তাছড়ার প্রথম আকর্ষণ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করবে না কারোরই। কারণ ঝর্ণার অবিরত জলধারা আর জলাধার মোহাবিষ্ট করে রাখে ভ্রমণপিপাসুদের। এবার বাকি ঝর্ণাগুলো দেখার পালা। দ্বিতীয় আর তৃতীয় ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য কুপিকাটাখুম ঝর্ণার বাঁদিকের পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে উপরে উঠতে হবে। বাকি ঝর্ণাগুলোতে যাওয়ার জন্য পাহাড়ি পথ বেয়ে ঝিরিপথে নামতে হবে। এভাবে ১০-১৫ মিনিট হাঁটলেই পেয়ে যাবেন একটি পয়েন্ট, যেখানে দুটো পথ। সোজা যে পথটি চলে গেছে, সেটি দ্বিতীয় ঝর্ণা বা মিঠাছড়া যাওয়ার পথ, আর বাঁদিকের পথটি তৃতীয় ঝর্ণা বাঘবিয়ানি যাওয়ার। আগের টার্নিং পয়েন্ট থেকে পাশের ঝিরিপথ ধরে ২৫-৩০ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন তৃতীয় ঝর্ণা বাঘবিয়ানির কাছে। এ ঝর্ণায় আসার পথ খুব একটা মসৃণ নয়। ঝিরিপথে বড় বড় পাথর, গাছের ডালপালা ইত্যাদি পড়ে থাকতে পারে। তাই এ ঝিরিপথ পাড়ি দেওয়ার সময় অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। তিনটি ঝর্ণার মধ্যে এ ঝর্ণার উচ্চতা সবচেয়ে বেশি এবং ত্রিভুজ আকৃতির। অনেক উঁচু থেকে পানির পতন আর গতির জন্য এ ঝর্ণাটি বেশ উপভোগ্য।
কিভাবে যাবেন
প্রথমে আপনাকে চট্টগ্রাম আসতে হবে। যদি কাছে থাকতে চান সীতাকুন্ড বাজারে থাকতে পারেন, এখানে থাকার হোটেল আছে। কাছাকছি মিরেরসরাই বাজার আছে সেখানেও থাকতে পারবেন। চট্টগ্রাম শহরে থাকতে চাইলে একেখান, অলংকার, নিউমার্কেট এলাকগুলোতে থাকতে পারেন।
যদি আপনি মিরেরসরাই বাজারে থাকেন তাহলে সকাল বেলা ১০ টাকা দিয়ে নয়াদুয়ারবাজারে চলে যেতে পারবেন। সীতাকুন্ড বাজারে থাকলে ২০/২৫ টাকা দিয়ে নয়াদুয়ারবাজারে আসতে পারবন। আর চট্টগ্রাম শহরে থাকলে প্রথমে অলংকার আসতে হবে। অলংকার থেকে চয়েস, উত্তরা বাসে করে নয়াদুয়ারবাজারে ৫০-৮০ টাকা ভাড়া নিবে।